নিদাহাস ট্রফিতে খেলার সুযোগ হলো না, কতটা হতাশার?
লাসিথ মালিঙ্গা: জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার আগে ২০১৭ সালে আমি ছিলাম শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি (৬ টি-টোয়েন্টিতে ১২ উইকেট)। জানি না কেন আমাকে বাদ দেওয়া হলো। এরপর ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেললাম, সেখানেও আমি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। জানি না, তার পরও কেন দলে নেওয়া হলো না। এবার ওয়ানডে টুর্নামেন্ট খেলছি। প্রথম দুই ম্যাচ ছিল বৃষ্টি বিঘ্নিত। আজ পুরো খেলা হলো, ৪ উইকেট নিলাম।
ওয়ানডের কথা বাদ দিলাম। আমার ভাবনায় ছিল বাংলাদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও এই নিদাহাস ট্রফি। টি-টোয়েন্টিতে কেন বাইরে আমি? সবচেয়ে হতাশার হলো, আমি কেন বাইরে, সেটির কারণ জানা নেই আমার। গত বছর আমি শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করছি। তার পরও কেন সুযোগ হয় না, জানি না আমি।
দলের বাইরে রাখার সময় শুরুতে বলা হয়েছিল আপনি বিশ্রামে। পরে টানা দুই সিরিজে আর নেওয়াই হলো না…
মালিঙ্গা: আমি শুনেছি ও পড়েছি, আসাঙ্কা গুরুসিনহা (শ্রীলঙ্কা দলের ম্যানেজার ও অন্যতম নির্বাচক) বলেছেন, সুরাঙ্গা লাকমল ও নুয়ান প্রদিপ আছে দলে। মালিঙ্গার দলে ফেরা খুব কঠিন। জানি না কেন এই ধরনের কথা বলেছেন। আমি আড়াইশর বেশি টি-টোয়েন্টি খেলেছি। প্রায় সাড়ে তিনশ উইকেট। ধরে নিলাম সেসব এখন অতীত। এখনও তো খারাপ করছি না। তবে তারা যদি মনে করে লাকমল ও প্রদিপ শ্রীলঙ্কার সেরা টি-টোয়েন্টি পেসার, আমার তাতে সমস্যা নেই।
ঘরোয়া ক্রিকেটে যেভাবে আগুন ছড়াচ্ছেন, দলে ফেরাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন?
মালিঙ্গা: চ্যালেঞ্জের কিছু নেই। আমি কিছু প্রমাণ করতে চাইনি। কি প্রমাণ করার আছে আমার? আমি শুধু জানি, আমাকে বাদ দেওয়ার কোনো কারণ নেই। কেন আমাকে আবার প্রমাণ করতে হবে? প্রমাণের কিছু নেই। পারফর্ম তো করেই যাচ্ছি।
শ্রীলঙ্কা কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে সম্প্রতি আপনাকে তুলনা করেছেন মাইকেল জর্ডানের সঙ্গে। বলেছেন আপনার সুযোগ এখনও আছে…
মালিঙ্গা: কবে? আমি তো ৪০ বছর পর্যন্ত খেলব না। আমার এখন ৩৪, আর কতদিন খেলব!
শ্রীলঙ্কার পেস আক্রমণে মনে হয় এমন একজনের অভাব আছে যিনি প্রয়োজনের সময় উইকেট এনে দিতে পারেন, সেই ‘এক্স ফ্যাক্টর’ যার আছে…
মালিঙ্গা: তারা (নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট) মনে করে, আমার অভাব তারা অনুভব করছে না। তাদের দৃষ্টিতে আমি হয়ত এখন আর যথেষ্ট ভালো নই!
আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, ওজন একটু কমিয়েছেন। ফিটনেস নিয়ে খাটছেন অনেক?
মালিঙ্গা: খাটতে তো হবেই। আমি একজন ক্রিকেটার। ক্রিকেট খেলাটাই আমার নেশা ও পেশা। সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হোক বা ঘরোয়া, খেলতে ভালো লাগে। এজন্যই ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। জিমে সময় কাটাচ্ছি। ৪ ওভার আর ১০ ওভার বোলিং আমি এখনও করতে পারি এবং উইকেট নিতে পারি।
গত মাসেই বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন। কিভাবে দেখছেন সামনের পথচলা?
মালিঙ্গা: আমার মনে হয় না, আরও তিন-চার বছর খেলতে পরব আমি। হয়ত আর দেড় বছর, বড়জোর দুই বছর খেলতে পারব। ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত অবশ্যই খেলতে পারি আমি, হয়ত ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। যদি তারা চায়, আমি প্রস্তুত। যদি না চায়, আমার সমস্যা নেই। আমি নিজে তো জানি, আমি কে!
টিম ম্যানেজমেন্ট বা নির্বাচকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে ভবিষ্যত নিয়ে?
মালিঙ্গা: তারা কিছু বলেনি। শুধু বলছে আমাকে নেওয়া হয়নি। আমি কারণ জিজ্ঞেস করতে যাইনি। শুধু শুনেছি গুরুসিনহার কথা যেটি বললাম, সেটি শুনেছি। এই তো।
নতুন কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে কথা হয়নি?
মালিঙ্গা: কথা আগে হতো অনেক। আমাদের ঘরোয়া টুর্নামেন্টের সময় এসেছিল, কথা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর কথা হয়নি। কারণ সে এখন শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের কোচ। আমি তার পেছনে ছুটতে চাই না। আমি অমন নই যে যেচে নিজের কথা বলব। নিজের মাঝেই থাকতে চাই। নিজের খেলায় মন দিতে চাই। আমি বল করতে পারি, উইকেট নিতে পারি। আমার পারফরম্যান্সই বলবে, আমি কে।
সামনে তো নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে আপনাকে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং মেন্টর। কিভাবে দেখছেন এই নতুন চালেঞ্জ?
মালিঙ্গা: ১৪-১৫ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি। অভিজ্ঞতা আছে কোন পরিস্থিতিতে কি করতে হয়। কোন সময় কোন স্কিলটা দরকার। আমি জানি কখন কোন জিনিসটি দরকার। সবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, খুব বেশি বোঝানোর দরকার নাই।
এরপরও কিছু সময় আসে যখন তারা সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারে না। চাপ থাকে। আমি তখন তাদেরকো বোঝাতে পারি কিভাবে সেই মুহূর্তগুলো জয় করতে হয়। মু্স্তাফিজও আছে সেখানে। আমি সত্যিই চাই ওকে সাহায্য করতে।
মুস্তাফিজকে কেমন দেখছেন এখন?
মালিঙ্গা: যখন সে এসেছিল, সত্যিই অসাধারণ ছিল। এখনও ভালো করছে। তবে লোকে চায় আরও বেশি। প্রত্যাশার চাপ থেকেই ওর হয়তো নিজের মধ্যে এটা সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। আর আমার মনে হয়, ও খুব বেশি চেষ্টা করছে। আমার মনে হয় না সে সবসময় নিজের ম্যাচ পরিকল্পনায় থাকতে পারছে।
ওর তিন-চার রকমের বৈচিত্র আছে। কিন্তু কখন, কোন পরিস্থিতিকে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, এটা আরও ভালো করে শিখতে হবে ওকে। আমার মনে হয়, ও একটু বেশি আগ্রাসী হচ্ছে এবং একটু বেশি শক্ত ভাবে চেষ্টা করছে। ওকে রিল্যাক্সড হতে হবে।
কি মনে হয়, সমস্যাটুকু শোধরাতে পারবেন?
মালিঙ্গা: অবশ্যই… আমি নিশ্চিত, পারব শতভাগ।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের প্রধান কোচ মাহেলা জয়াবর্ধনে। তার সঙ্গে কাজ করাটাও নিশ্চয়ই রোমাঞ্চকর হবে?
মালিঙ্গা: অবশ্যই। ১০-১২ বছর একসঙ্গে খেলেছি আমরা। ওর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। ধরনটা জানা আছে আমার। কাজ করতে সুবিধে হবে।
সূত্রঃ bdnews24.com